মোহাম্মদ ইব্রাহিম মোস্তফা, উখিয়া
প্রকাশিত: ১২/০৯/২০২৫ ৮:৫৭ এএম

দক্ষিণ কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী ব্যস্ততম উখিয়ার আরাকান সড়ক এখন অবৈধ পার্কিং ও ঝুপড়ি দোকানের দখলে। উপজেলার কোটবাজার ও কুতুপালং এলাকায় সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছে অবৈধ পার্কিং ও স্থাপনা, যার ফলে দুই মিনিটের পথ পাড়ি দিতে লাগছে ঘণ্টারও বেশি সময়। যানজট ও বিশৃঙ্খলায় চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত শতশত যানবাহন, ভিআইপিদের চলাচল, রোগী বহনকারী যানবাহন, স্কুলগামী শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ, ব্যবসায়ী ও সাধারণ পথচারীরা। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ বাজার ও পার্কিং দীর্ঘদিন ধরে চলা এ সমস্যা স্থানীয় প্রশাসনের নজর এড়িয়ে থাকলেও জনদুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছেই।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কোটবাজারে সড়কের পূর্ব পাশে সারি সারি করে পার্ক করা হয়েছে সিএনজি, অটোরিকশা, ইজিবাইক ও ছোট যানবাহন। আর সড়কের পশ্চিম পাশে গড়ে তোলা হয়েছে ঝুপড়ি দোকান। একই অবস্থা কুতুপালং বাজারেও। ফলে এসব বাজার এলাকাগুলোতে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।

শুধু তাই নয়, মরিচ্যা বাজার, বালুখালী, থাইংখালী ও পালংখালী বাজারেও চিত্র প্রায় একই। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহল ও প্রশাসনের নীরবতায় প্রতিনিয়ত এ সড়ক দখল করে লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি করছে একটি সিন্ডিকেট।

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, প্রতিটি দোকান থেকে দৈনিক ১০০ থেকে ২০০ টাকা এবং প্রতিটি গাড়ি পার্কিং থেকে ২০ থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এসব অর্থ দিয়ে প্রশাসনের একাংশকে ‘ম্যানেজ’ করে দখল কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে তারা।

সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয় হলো, এসব অবৈধ দখলের ঘটনা চোখের সামনে ঘটলেও তা দেখেও না দেখার ভান করছেন ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিশেষ করে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রতিদিন কোটবাজার হয়ে অফিসে যাতায়াত করেন। কিন্তু এসি গাড়ির ভেতর থেকে তিনি এসব দুর্ভোগ উপলব্ধি করছেন না বলেই স্থানীয়দের দাবি।

কোটবাজার এলাকার আজিজ নামের এক পথচারী বলেন, বাজারে একটু যাওয়া মানেই ঘণ্টা জ্যামে বসে থাকা। জরুরি রোগী নিয়েও অনেক সময় বিপাকে পড়েছি। এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কের একপাশে সিএনজি, অন্য পাশে ঝুপড়ি দোকান—সব মিলিয়ে সড়কের অবস্থা একেবারে নাজুক।

রত্নাপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানায়, আমার প্রতিদিন স্কুলে যেতে দেরি হয়ে যায়। বাড়ি থেকে যেখানে ৫ মিনিট লাগে, সেখানে কোটবাজারের জ্যামের জন্য ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে বের হতে হয়। সকালে রাস্তায় গাড়ি একেবারে নড়ে না। এসব দেখভালের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশ থাকা না থাকার সমান।

কুতুপালং বাজার এলাকার জাবেদ নামের এক চাকরিজীবী বলেন, সকালে অফিসে যাওয়ার সময় প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে বের হতে হয়। কারণ, কুতুপালং বাজারে জ্যামে অফিস সময় কেটে যায়। এই বাজারের রাস্তা এখন ব্যবসায়ী ও পার্কিংয়ের দখলে। আমরা আর চলতে পারি না।

কোটবাজার সড়ক দখল করে ব্যবসা পরিচালনাকারী এক দোকানদার বলেন, আমরা এই দোকান করি অতিরিক্ত টাকা দিয়ে। আমরা কেন সড়ক দখল করব? আমরা টাকার বিনিময়ে এখানে বাজার বসিয়েছি। প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা করে প্রতি দোকান থেকে সংগ্রহ করে এক ভাই। টাকা দিয়ে নিরাপদে ব্যবসা করছি৷

গাড়ি পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকা এক লাইনম্যান জানান, এই পার্কিংয়ের বিনিময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আমাদের দিতে হয়। কারা নেয়, আমরা জানি না। আমরা শুধু নির্দেশ পালন করি। টাকা না দিলে পার্কিং করতে দেয় না৷ আমাদের পার্কিং বন্ধ করতে হলে নিরাপদ পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক৷

কোটবাজার বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি খুরশেদ বাবুল বলেন, আমরা চাই অবৈধ দোকানগুলো উচ্ছেদ হোক। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কে প্রতিদিন সকাল-বিকেল জ্যাম থাকলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এগুলো স্থায়ীভাবে রোধ করতে হলে রোড ডিভাইডার বসাতে হবে। অন্যতায় জ্যাম লেগেই থাকবে৷

কোটবাজার ট্রাফিক সার্জন মনজুর-কে যানজটের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে বলেন, সেনসিটিভ কিছু বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেছেন, সেগুলোর উত্তর আমার কাছে নেই। তারপরও জনবল সংকট আমাদের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আর বড় ইস্যুগুলো নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। তারপরও যানজট নিরসনে আমরা কাজ করছি।

শাহপুরী হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, কুতুপালং এলাকায় আগের তুলনায় যানজট একটু কমেছে। কোটবাজার যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে। আমরা নিয়মিতভাবে অভিযান পরিচালনা করি। তবে প্রশাসনের সমন্বয় ছাড়া স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে আমরা শীঘ্রই যৌথ অভিযান পরিচালনা করব। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সড়ক দখল করে অবৈধ ঝুপড়ি দোকান ও পার্কিং উচ্ছেদের জন্য ইতিমধ্যে কাজ চলছে।

পাঠকের মতামত

উখিয়ায় বাল্যবিবাহ বন্ধে শিশু সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত

উখিয়ায় বাল্য বিবাহের হার কমিয়ে আনতে শিশু সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন বিষয়ক অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ...

বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল হক চেয়ারম্যানের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন

রামু উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল হক-এর দাফন সম্পন্ন হয়েছে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। ...